রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

ভূমিদস্যু চক্রের কবলে সরকারি জায়গা

amarsurma.com

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
সরকারি পতিত ভূমি দখল করে একটি ভূমিদস্যু চক্র নামমাত্র টাকার বিনিময়ে বিক্রয় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চক্রটি অত্যন্ত গোপনে সরকারের কাছ থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বন্দোবস্ত নিয়ে ভূমি বিক্রি করছে বলে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। চক্রটির কাছে সরকারি ভূমি বন্দোবস্ত না দিতে গত ১৫ নভেম্বর এলাকার তিনটি গ্রামের ৫৬ জন স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগনামা দিরাই সহকারি কমিশনার ভূমির কাছে দেয়া হয়। সরকারি জায়গাটি হল সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের দয়াদুপনী মৌজার ১নং খতিয়ানের ১৬নং জেএলস্থ গোপাট। যার ১০০১নং দাগে ৩৪ শতক খাল, ১০০২নং দাগে ১.১০ একর লায়েক পতিত ও ১০০৩নং দাগে ৭৭ শতক নালা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জেলার দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের আলীনগর, নূরনগর ও পাশানগর গ্রামের পাশের পতিত সরকারি ভূমি যুগ যুগ ধরে তারা ব্যবহার করে আসছেন। সম্প্রতি এলাকার কিছু ভূমিখেকো চক্রের কুদৃষ্টি পড়ে উক্ত পতিত জমিতে। তারা অত্যন্ত গোপনে বন্দোবস্ত নিতে পায়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই পতিত জমি দিয়ে তিন গ্রামের কৃষকদের গরু চড়ানো, পানি খাওয়ানো ও বৈশাখে হাওরের ধান নিয়ে আসা হয় এই গোপাট দিয়ে। এই রাস্তা বন্দোবস্ত দিলে কিংবা ভূমিদস্যু চক্রের দখলে চলে গেছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে এলাকার কৃষকরা।
এদিকে নূরনগর গ্রামের ফিরোজ আলী ও তার নিজস্ব বাহিনীর অপকর্মের বিবরণ দিয়ে ২৪ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি দরখাস্ত করা হয়। আলীনগর, নূরনগর ও পাশানগর গ্রামের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে এই অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ফিরোজ আলী ও তার ছেলে জয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একাধিক বাহিনী। যারা এলাকার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করছে। তাদের বাহিনীর লোকের কারণে পুরো এলাকা নিরাপত্তাহীনভাবে রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। ভূমিদস্যু ফিরোজ আলী বাহিনীর তাÐবে এলাকার নিরীহ জনগণ আতঙ্কগ্রস্থ।
জানা যায়, মৃত মিনতার উদ্দিনের ছেলে ফিরোজ আলী তার বাহিনীর গডফাদার হিসেবে পরিচিত। এছাড়া তার ভাই জমসেদ ও ছলিম, মৃত এমরান মিয়ার ছেলে নবাব মিয়া ও সুজা মিয়া, মৃত এতর আলীর ছেলে পারুল ও রেজু, মিনফাজ উদ্দিনের ছেলে ছুটিল, মৃত মিন্নাস মিয়ার ছেলে বছু, মৃত মনফাজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুন নূরসহ অনেকেই এলাকায় নানা অপকর্মে জড়িত।
এ কারণেই ফিরোজ আলী ও তার বাহিনীর নামটি শুনলেই এলাকার জনগণ শঙ্কিত ও আতঙ্কগ্রস্থ হয়। সরকারি গোপাটসহ সরকারি জমি এবং এলাকার জনগণের জমিও দখলে লিপ্ত রয়েছে। দিরাই উপজেলার দয়াদুপনি মৌজার জেএল নং-১৬, খতিয়ান নং-১, দাগ নং-১০০২ গোপাটটি ফিরোজ আলী এবং তার সদস্য নবাব, পারুল, জমসেদ, গিয়াস, রেজু, সলিম, বছু, ছুটিল, ছোট মিয়া, আব্দুন নূরগংরা উল্লেখিত গোপাটে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার টাকা করে ভিটা বিক্রয় করে। এই গোপাট দিয়ে পশ্চিমের হাওরগুলো থেকে হাজার হাজার টন ধান, খড়সহ যাবতীয় জিনিস এবং গরু-বাছুর আসা-যাওয়া করে। উক্ত গোপাটটি ছাড়া পশ্চিমের হাওরগুলো থেকে ধান এবং গরু-বাছুর আসা-যাওয়ার আর কোন বিকল্প রাস্তা নেই।
এলাকার নিরীহ জনগণ উক্ত বাহিনীকে ঘরবাড়ি নির্মাণে বাঁধা দিলে বিগত ১৭ই ডিসেম্বর তাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে সুমন, সফর, তারাজুল, সফিকুল, ইউসুফ, শাহমুলুক, শিবলু, ফখরুল, লাভলুসহ আরও অনেককে রামদা ও দাঁড়ালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে এদেরকে গুরুতরভবে আহত করে। আহতদের মধ্যে সুমন, সফর, তারাজুল, সফিকুলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট উসমানী মেডিকেলে চিকিৎসাধী ছিল।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, গোপাটে বাড়িঘর নির্মাণে বাঁধা দিতে গেলে বৈধ জমিনে চাষ করতে দিচ্ছে না। ৫ হাল জমিনের পানি সেচের বাঁধ ৩ বার কেটে পানি ছেড়ে দেয় ও এই পানি সেচে বাঁধা সৃষ্টি করে উক্ত বাহিনী। তাদের আধিপত্যে পুরোটা সামিপুরের হাওর, কাউয়াজান হাওর এবং কাউজ্জার হাওর জলমহাল করে মৎস্য আমদানী করে।
তাদের দখলকৃত জায়গাসমূহ ১নং নালা সামিপুর, দাগ নং-১৮৩, ২নং নালা ২০৬, সরকারি গোপাট দাগ নং-১৬৬, কুন্দাকাটি পানির নালা ১৪৯, কাউয়াজানের দাইর, দাগ নং-৯৬-৯৮ অবৈধভাবে দখল করে টাকার পাহাড় বানিয়ে নিরীহ জনগণকে হেনস্থা করে। নিরীহ জনগণের বৈধ জমিতে ১ সুতা জাল ফেলে মাছ ধরার সাহস পায় না। পুরোটা হাওর পানিবন্দী করে রাখে এবং সময়মত ধান রোপন করা যায় না। তাদের অত্যাচারে নিরীহ জনগণ মুখ খোলার সাহসও পায় না। ফিরোজ বাহিনী খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, নারী নির্যাতন-মামলাসহ অভিযোগে অভিযুক্ত। আর বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে, এলাকাবাসি মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এদিকে পিতা ফিরোজ আলীর সাথে সাথে তার ছেলে জয়ও একটি সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। জানা যায়, জয় বাহিনীর তা-বে এলাকার জনগণ অতিষ্ট। রাত্রে চুরির তা-ব চালায়, ফলে মানুষ ঘুমাতে পারে না। টিভি, মোবাইল ও টাকা-পয়সাসহ চুরির বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত। জয় বাহিনীর অন্য সদস্যরা হলো আনফর আলীর ছেলে পাভেল, বছু মিয়ার ছেলে রুমান, মিন্নাস মিয়ার ছেলে ছোট মিয়া, এতর আলীর ছেলে তয়িবুর ও রেজু, আব্দুন নূরের ছেলে হাকিম, গিয়াসের ছেলে স্বাধীন, জমসেদের ছেলে নাঈম, ছুটিলের ছেলে বক্তিয়ার, ছোট মিয়ার ছেলে মহন, জারজ কালিয়া, এমরানের ছেলে সানোয়ার, জাহাঙ্গীরের ছেলে মাসুক প্রমুখ। উক্ত বাহিনী রাতে বিভিন্ন অপকর্ম ও তা-ব চালায়, তাদের কারণে নিরীহ জনগণ ঘুমাতে পারে না। জয় বাহিনীর গডফাদার হচ্ছে পারুল মিয়া বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে চাইলে ফিরোজ আলীর সঙ্গে একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য নেযা যায়নি। তিনি একটি মামলার আসামি হিসেবে বর্তমানে পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com